
জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তোমিইচি মুরাইয়ামা আর নেই। ১০১ বছর বয়সে তিনি দক্ষিণ-পশ্চিম জাপানের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকালে। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। তিনি বলেন, “মুরাইয়ামা সেই সময়ের কঠিন নানা সংকট দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিয়েছিলেন। শান্তিপ্রিয় জাপানি জাতির কাছে তিনি চিরকাল শান্তির এক সত্যিকার বার্তাবাহক হিসেবে স্মরণীয় থাকবেন।”
তোমিইচি মুরাইয়ামা ছিলেন জাপানের ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র সমাজতন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী। ১৯২৪ সালে কিউশু দ্বীপের ওইতা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। টোকিওর মেইজি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই বামপন্থি রাজনীতির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং পরবর্তীতে সক্রিয়ভাবে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। স্থানীয় জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে কয়েক মেয়াদ দায়িত্ব পালনের পর ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো তিনি জাপানের সংসদের নিম্নকক্ষে নির্বাচিত হন।
১৯৯৩ সালে মুরাইয়ামা জাপানের সমাজতন্ত্রী দলের সভাপতি হন। এক বছর পর, ১৯৯৪ সালের জুন মাসে নাটকীয় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে তিনি দেশের ৮১তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। সে সময়ের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন উদার গণতন্ত্রী দল (এলডিপি) একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়, ফলে আটটি বিরোধী দলের জোট সরকার গঠিত হয়। পরবর্তীতে সেই জোটে ভাঙন দেখা দিলে এলডিপি ও সমাজতন্ত্রী দলের মধ্যে গোপন আলোচনার মাধ্যমে নতুন সম্মিলিত সরকার গঠিত হয়—আর সেই সরকারেই প্রধানমন্ত্রী হন মুরাইয়ামা।
যদিও তাঁর মন্ত্রিসভা বড় কোনো অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক সাফল্য অর্জন করতে পারেনি, তবুও মুরাইয়ামা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের জন্য। প্রথমত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জাপানের আগ্রাসনের কারণে চীন ও এশিয়ার অন্যান্য দেশের জনগণের প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার সাহসী পদক্ষেপটি তাঁর নেতৃত্বেই নেওয়া হয়। এটি ছিল জাপানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন একটি স্বীকারোক্তিমূলক ক্ষমা প্রার্থনা, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়।
দ্বিতীয়ত, তিনি হিরোশিমা ও নাগাসাকির আণবিক বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য একটি বিশেষ আইন পাস করান। এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা, চিকিৎসা ও সামাজিক স্বীকৃতি প্রদান নিশ্চিত হয়।
তোমিইচি মুরাইয়ামা ছিলেন মানবিকতা, নৈতিক সাহস ও শান্তির প্রতীক। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ও আদর্শ এখনো জাপানের গণতন্ত্র ও সমাজতান্ত্রিক চেতনার ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে।