
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে চীনের বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি তারা উদ্ভাবন করেছেন এক বিশেষ ধরনের হাড় মেরামতকারী ইনজেকশন, যার নাম “Bone-02”। এটি মূলত এক ধরনের ‘হাড়ের গ্লু’, যা শঙ্খের প্রাকৃতিক আটকে থাকার ক্ষমতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, মাত্র ৩ মিনিটেই এই গ্লু ভাঙা হাড়কে আবার সংযুক্ত করতে সক্ষম, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
Bone-02 দেখতে সাধারণ ইনজেকশনের মতো হলেও এর কার্যকারিতা অসাধারণ। ভাঙা হাড়ের জায়গায় এটি ইনজেকশন দেওয়ার পর রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে এটি দ্রুত শক্ত হয়ে যায় এবং ভাঙা হাড়ের দুই প্রান্তকে দৃঢ়ভাবে যুক্ত করে ফেলে। প্রচলিত হাড় জোড়া লাগানোর চিকিৎসায় যেখানে প্লাস্টার, স্ক্রু বা সার্জারির প্রয়োজন হয়, সেখানে এই ইনজেকশন একেবারে অল্প সময়ে ও ব্যথাহীনভাবে হাড় মেরামত করতে পারে।
গবেষক দলটি জানিয়েছেন, Bone-02 উদ্ভাবনের মূল ধারণা এসেছে সামুদ্রিক শঙ্খ বা মলাস্ক প্রজাতির প্রাণীদের প্রাকৃতিক আঠালো পদার্থ থেকে। এই প্রাণীরা যেভাবে পানির নিচে পাথর বা অন্য বস্তুর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে নিজেদের আটকে রাখে, সেই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়েছে এই নতুন বায়োমেটেরিয়াল। এটি শরীরে ব্যবহারের পর ধীরে ধীরে শরীরের টিস্যু ও হাড়ের সঙ্গে মিশে যায় এবং শেষে প্রাকৃতিকভাবে শোষিত হয়ে যায়—কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ছাড়াই।
প্রাথমিক পরীক্ষায় ১৫০ জনেরও বেশি রোগীর ওপর এই হাড়ের গ্লু প্রয়োগ করা হয়েছে। ফলাফল ছিল আশাব্যঞ্জক—রোগীদের হাড় আগের তুলনায় দ্রুত এবং শক্তভাবে জোড়া লেগেছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, Bone-02 শরীরে প্রবেশের পর হাড়ের কোষের সঙ্গে ক্রিয়াশীল হয়ে হাড়ের স্বাভাবিক আরোগ্য প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এতে প্রচলিত চিকিৎসার তুলনায় রোগীর সুস্থ হয়ে উঠতে সময় কম লাগে, আর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনও প্রায় নেই বললেই চলে।
তবে গবেষকরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, এখনই এই চিকিৎসাকে চূড়ান্ত সমাধান হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। এটির নিরাপত্তা, দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এবং বিভিন্ন বয়স ও শারীরিক অবস্থায় কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য আরও বড় পরিসরের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক পিয়ার-রিভিউড গবেষণার মাধ্যমে যাচাই না হওয়া পর্যন্ত এটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি Bone-02 ভবিষ্যতে অনুমোদন পায়, তবে এটি চিকিৎসা ক্ষেত্রে এক বিপ্লবী পরিবর্তন আনতে পারে। বিশেষ করে দুর্ঘটনায় আহত রোগী, বয়স্কদের হাড় ভাঙা, কিংবা জটিল সার্জারির বিকল্প হিসেবে এটি চিকিৎসকদের হাতে এক যুগান্তকারী সমাধান হতে পারে। দ্রুত, সহজ এবং ব্যথামুক্ত এই প্রযুক্তি হাড় মেরামতের ধারণাকেই নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করবে—যেখানে ভাঙা হাড়ের চিকিৎসা আর দীর্ঘমেয়াদি দুর্ভোগ নয়, বরং কয়েক মিনিটের মধ্যেই সম্ভব হবে কার্যকরভাবে।