
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের রাজনৈতিক প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ ব্যবহার করতে চায়। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদের কাছে লিখিতভাবে দাবি জানিয়েছেন—শাপলাকে তাদের দলীয় প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দিতে হবে। পাশাপাশি, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় প্রতীক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা প্রণয়নেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে সাবেক এনসিপি নেত্রী ও অভিনেত্রী নীলা ইস্রাফিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী পোস্ট দিয়েছেন, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
নীলা ইস্রাফিল লিখেছেন—
‘শাপলা’ কেবল একটি ফুল নয়, এটি বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক। সংবিধানের দ্বিতীয় তফশিলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, জাতীয় প্রতীকে শাপলা ফুলকে কেন্দ্র করে ধান, পাট ও জ্যোতির্ময় সূর্য ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ, জাতীয় প্রতীকের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে শাপলা ফুল। তাই এই প্রতীক কোনো রাজনৈতিক দলকে বরাদ্দ দেওয়া হলে তা সরাসরি রাষ্ট্রীয় প্রতীকের অপব্যবহার হবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, Election Symbols (Allocation and Registration) Order, 1972 অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতীক নির্ধারণ ও অনুমোদনের ক্ষেত্রে। একই সঙ্গে আইনটিতে পরিষ্কার বলা আছে—যে প্রতীক জাতীয় প্রতীক, ধর্মীয় চিহ্ন বা রাষ্ট্রীয় মর্যাদার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তা কোনো রাজনৈতিক দলকে বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। কারণ এতে রাষ্ট্রীয় প্রতীকের মর্যাদা ও নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
নীলার মতে, অনেকেই যুক্তি দেন “ধানের শীষ”ও জাতীয় উপাদান। কিন্তু তিনি ব্যাখ্যা করেন, “ধানের শীষ” কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতীক নয়, এটি কৃষিভিত্তিক সমাজের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে “শাপলা” জাতীয় প্রতীকের অবিচ্ছেদ্য অংশ—যা রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের প্রতীক। এই কারণেই আইনগতভাবে শাপলাকে রাজনৈতিক প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, “শাপলা মানে বাংলাদেশ, কিন্তু বাংলাদেশ কারও দলের নয়। জাতীয় প্রতীক তখনই মর্যাদা পায়, যখন সেটিকে রাষ্ট্রের বাইরে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয় না। যারা সত্যিকারের রাজনীতি করেন, তারা জানেন প্রতীক মানে শুধু ভোট নয়—এটি বিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি। আর ‘শাপলা’র বিশ্বাসটা সবার, কোনো একক দলের নয়।”
তার বক্তব্যের শেষাংশে তিনি বলেন—আইন, সংবিধান ও রাষ্ট্রের মর্যাদা একই কথা বলছে: রাষ্ট্রের প্রতীককে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা উচিত নয়। রাষ্ট্র যদি দলীয়করণে রূপ নেয়, তাহলে গণতন্ত্রের মানেই হারিয়ে যাবে। তাই “শাপলা”কে দলীয় প্রতীক নয়, বরং রাষ্ট্রীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবেই দেখা উচিত।