Date: October 20, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / শিক্ষাঙ্গন / ৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচন: চবি ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ! - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচন: চবি ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ!

October 15, 2025 11:11:11 AM   অনলাইন ডেস্ক
৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচন: চবি ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ!

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন। সকালে ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ—প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মুখে ছিল উচ্ছ্বাস, আনন্দ আর অপেক্ষার উত্তেজনা। অনেকেই সারারাত ধরে বন্ধুদের সঙ্গে গান গেয়ে, মেহেদি লাগিয়ে উৎসবের প্রস্তুতি নিয়েছেন। ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী শানু আক্তার নদী বলেন, “আমাদের কাছে এই নির্বাচন ঈদের মতো। আমরা সারারাত আনন্দ করেছি। আশা করছি, একটি নির্বিঘ্ন নির্বাচন হবে।”

রাসকিহ্ রাইদাহ্ ইসলাম, প্রথম বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী, জানান—“অনেক বছর পর চাকসু নির্বাচন হচ্ছে, আমরা সবাই খুব খুশি। ফার্স্ট ইয়ারেই ভোট দিতে পারছি, এটা সত্যিই দারুণ লাগছে।” যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শিফা ইসলাম রিয়া বলেন, “আমি শুরু থেকেই এক্সাইটেড ছিলাম। সকাল সকাল এসে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, তবুও আনন্দ লাগছে কারণ ভোট দিতে পারব।”

বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনে ভোটারদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৭,৫১৬ জন, যার মধ্যে ১১,৩২৯ জন ছাত্রী। কেন্দ্রীয় সংসদে পদ রয়েছে ২৬টি, আর প্রতিটি হল ও হোস্টেল সংসদে ১৪টি করে পদ। সব মিলিয়ে প্রার্থী সংখ্যা ৯০৮ জন—এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৫ জন, যারা ১৩টি প্যানেল ও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন।

ভোটগ্রহণ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ভবনে—আইটি ভবন, নতুন কলা ভবন, বিজ্ঞান অনুষদ, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ও বাণিজ্য (বিবিএ) অনুষদ ভবনে। বিশেষভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য চাকসু ভবনের দ্বিতীয় তলায় আলাদা ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। পাঁচটি ভবনের ৬০টি কক্ষে প্রায় ৭০০টি বুথে ভোট গ্রহণ চলছে। শিক্ষার্থীরা ওএমআর ব্যালট শিটে ভোট দিচ্ছেন—চাকসুর জন্য চার পৃষ্ঠার এবং হল ও হোস্টেল সংসদের জন্য এক পৃষ্ঠার ব্যালট ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্রধান তিনটি পদ—ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে যথাক্রমে প্রার্থী সংখ্যা ২৪, ২২ এবং ২১ জন। এছাড়া খেলাধুলা ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক পদে ১২ জন, সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পাদক পদে ১৭ জন, দপ্তর সম্পাদক পদে ১৭ জন, সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ২০ জনসহ অন্যান্য পদের জন্যও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পাঁচটি নির্বাহী সদস্য পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৮৫ জন।

চবি’র নয়টি ছাত্র হল, পাঁচটি ছাত্রী হল এবং একটি হোস্টেল সংসদে মোট ৪৯৩ জন প্রার্থী লড়ছেন। সোহরাওয়ার্দী হলে সর্বোচ্চ ৫৩ জন প্রার্থী, অন্যদিকে ছাত্রী হলগুলোর কিছু পদে একক প্রার্থী রয়েছেন। নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ১৪টি পদের বিপরীতে ১৭ জন প্রার্থী, যার মধ্যে ১১টি পদে একক প্রার্থী আছেন। সেখানে আদিবাসী ও বড়ুয়া সম্প্রদায়ের ছাত্রীরা মিলে “হৃদ্যতার বন্ধন” নামে পূর্ণাঙ্গ একটি প্যানেল দিয়েছে। শামসুন নাহার হলে প্রার্থী ২২ জন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলে সর্বাধিক ৩০ জন প্রার্থী।

চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলে মোট ১০টি পদের বিপরীতে প্রার্থী ২০ জন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটি সপ্তম চাকসু নির্বাচন। প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭০ সালে, যেখানে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন ছাত্রলীগের মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং জিএস হন আবদুর রব—যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ হন। দ্বিতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালে; ভিপি হন ছাত্র ইউনিয়নের শামসুজ্জামান হীরা এবং জিএস হন মাহমুদুর রহমান মান্না। এরপর ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৮১ ও ১৯৯০ সালে আরও চারটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের নির্বাচনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের প্রার্থী জাতীয় ছাত্রলীগের নাজিম উদ্দিন ভিপি এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আজিম উদ্দিন আহমদ জিএস নির্বাচিত হন।

দীর্ঘ বিরতির পর আয়োজিত এই নির্বাচনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এখন রঙিন, উচ্ছ্বাসে ভরপুর এবং শিক্ষার্থীদের কাছে সত্যিই এক উৎসবের আবহে পরিণত হয়েছে—একটি “চাকসু ঈদ”।