
নাটোরের লালপুরে ঘটেছে এক অনুপ্রেরণাদায়ক ঘটনা—যেখানে বাবা-মেয়ে একসঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সফল হয়েছেন। দীর্ঘ ২৫ বছর পর ফের পড়াশোনার পথে ফিরে আসা বাবা আব্দুল হান্নান এবং তার মেয়ে হালিমা খাতুন এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় দুজনেই উত্তীর্ণ হয়েছেন।
আব্দুল হান্নান পেয়েছেন জিপিএ ৪.৩৩, আর তার মেয়ে হালিমা খাতুন অর্জন করেছেন জিপিএ ৩.৭১। স্থানীয়রা তাদের এই অসাধারণ সাফল্যে মুগ্ধ হয়ে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন।
১৯৯৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর হান্নানের শিক্ষাজীবন থেমে গিয়েছিল। সংসারের দায়-দায়িত্বে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও তার মনে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ কখনও নিভে যায়নি। অবশেষে ২০২৩ সালে গোপালপুরের রুইগাড়ি উচ্চবিদ্যালয় থেকে পুনরায় এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেন তিনি। এরপর ২০২৫ সালে রাজশাহীর বাঘার কাকড়ামারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করেন। অন্যদিকে তার মেয়ে হালিমা খাতুন গোপালপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে একই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
হালিমা জানান, পরিবারের আর্থিক সংকট থাকা সত্ত্বেও বাবার অধ্যবসায়ের মানসিকতা তাকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি বলেন, “আমরা একসঙ্গে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করতে চাই।”
আব্দুল হান্নানও নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, “ছোটবেলায় দারিদ্র্যের কারণে পড়াশোনা শেষ করতে পারিনি। কিন্তু মেয়েকে পড়াতে গিয়ে নিজের মধ্যে আবার শেখার আগ্রহ জেগে ওঠে। বয়স কোনো বাধা নয়, ইচ্ছা থাকলে শেখা সম্ভব।”
লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান এ ঘটনাকে সমাজের জন্য এক উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, “বাবা-মেয়ে একসঙ্গে এইচএসসি পাস করেছেন—এটি শুধু প্রশংসনীয়ই নয়, বরং সমাজে শিক্ষার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করবে।”
এই গল্পটি শুধু এক পরিবার নয়, বরং সমগ্র সমাজের জন্য এক অনুপ্রেরণার প্রতীক—যা মনে করিয়ে দেয়, জ্ঞানার্জনের জন্য বয়স কখনও বাধা নয়, বরং ইচ্ছাশক্তিই আসল চালিকা শক্তি।