
রাজধানীতে হেযবুত তওহীদ কেন্দ্রীয় ছাত্র ফোরামের ঢাকা বিভাগীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১১ অক্টোবর ২০২৫) সকালে ঢাকার ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) তে ‘তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে ছাত্রদের ভূমিকা’ শীর্ষক এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
হেযবুত তওহীদ ছাত্র ফোরামের ঢাকা বিভাগীয় সভাপতি জাকারিয়া মাহথির এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের প্রধান উপদেষ্টা খাদিজা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সংগঠনের নারী বিষয়ক কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রুফায়দাহ পন্নী, ঢাকা বিভাগের সভাপতি ও ছাত্র ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ, কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক সাইফুর রহমান, কেন্দ্রীয় নারী নেত্রী ও ছাত্র ফোরামের উপদেষ্টা আয়েশা সিদ্দিকা, কেন্দ্রীয় ছাত্র ফোরামের সভাপতি রাদ উল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মিফতাউল জান্নাত প্রমুখ।
রুফায়দাহ পন্নী তার বক্তব্যে বলেন, বাংলার ইতিহাসের সাথে তারুণ্য বিশেষভাবে জড়িত। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান কিংবা মহান মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখসারিতে থেকে সংগ্রামী নেতৃত্ব দিয়েছেন তরুণরা। কিন্তু সেই স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পর গত বছরের জুলাই-আগস্টে দেশকে আবারও মুক্ত করতে হলো! তাহলে প্রকৃত স্বাধীনতা কী? বাঙালি জাতি কি আদৌ প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে? যে পরিবর্তনের শপথকে সামনে রেখে জুলাই-আগস্টে লাখো তরুণ রাজপথে নেমেছিল সেটিও কতটুকু অর্জিত হবে- তা নিয়েও এখন সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। তাহলে প্রশ্ন থাকে- এভাবেই কি তরুণদের শক্তিকে অপব্যবহার করা হবে? এভাবেই কি তরুণরা ষড়যন্ত্রকারী অপশক্তির কাছে বারবার প্রতারিত হবেন? -প্রশ্ন রাখেন তিনি।
হেযবুত তওহীদের এই নারী নেত্রী বলেন, তরুণদের সামনে এতদিন মূলতঃ দুটো চ্যালেঞ্জ ছিলো- (০১) একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে একতাবদ্ধ হয়ে নিজের প্রতিভা, বুদ্ধিবৃত্তি আর শক্তির বিকাশ ঘটতে পারে, (০২) একজন নেতা, যার নেতৃত্বে সঠিক পথ এবং আদর্শে বলীয়ান হবে লাখো তরুণ। আলহামদুলিল্লাহ, এই দুটো বিষয়েরই অত্যন্ত সুচারু নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ। মানবজাতির সম্মুখে তিনি প্রেরণ করেছেন সত্যনিষ্ঠ নেতা ও সঠিক আদর্শ। জ্বি, হেযবুত তওহীদ হলো সেই আদর্শ এবং হেযবুত তওহীদের নেতা জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম হলেন সেই নেতা -দাবি করেন তিনি।
হেযবুত তওহীদের ঢাকা বিভাগের সভাপতি ও ছাত্র ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ বলেন, ‘বৈষম্যহীন একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে আল্লাহর হুকুম-বিধানে প্রত্যাবর্তন করতে হবে, তওহীদের আদর্শকে ধারণ করতে হবে। আর এই আদর্শ বাস্তবায়নের মূল চালিকাশক্তি হলো ছাত্রসমাজ।’
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীতে যত বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে প্রতিটি বিপ্লবের পেছনে তারুণ্যের আত্মত্যাগ মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু প্রায়শই তা কাক্সিক্ষত সফলতা পায়নি। কারণ বিপ্লব হলো একটি পরিবর্তনের অঙ্গীকার, কিন্তু বিপ্লব-পরবর্তী সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যদি সুনির্দিষ্ট জীবনবিধান বা রূপরেখা না থাকে, তবে সেই বিপ্লব ব্যর্থ হতে বাধ্য।”
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, “আজকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের সেই আদর্শে ফিরে যেতে হবে, আর তা হলো তওহীদভিত্তিক জীবনব্যবস্থা। এই মুক্তির বার্তা নিয়েই হেযবুত তওহীদের তরুণ সমাজের প্রতিনিধিদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এই তারুণ্যের শক্তির মাধ্যমেই একটি তওহীদভিত্তিক শান্তিময় সমাজ গঠন হবে, ইনশাল্লাহ।”
কেন্দ্রীয় ছাত্র ফোরামের সভাপতি রাদ উল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, ‘রুশ বিপ্লব, ফরাসী বিপ্লবের নায়কেরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা মানুষকে স্বর্গ উপহার দেবে, বৈষম্য দূর করে সমাজে ন্যায়, সাম্য, সুবিচার প্রতিষ্ঠা করবে। শান্তির আশায় কেউ গণতন্ত্র কেউ আবার সমাজতন্ত্রকে আলিঙ্গন করে নিল। পরবর্তীতে দেখল যে, তাদের তৈরি স্বর্গ হাবিয়া দোজখ ছাড়া কিছু নয়।’
তিনি বলেন, ৭১’ এ মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করা হয়েছে। স্বাধীনতার পরও অনেক আন্দোলন হয়েছে। ৯০’ এর গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। এর পুনরাবৃত্তি হলো এই ২৪’ শে। শত শত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তাজা প্রাণ, এদেশের অমূল্য সম্পদ, মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের জীবন দিয়েছেন। এই বলিদান দিয়ে তারা একটি রেজিম পরিবর্তন করেছেন মাত্র। কিন্তু কার্যতঃ জাতির মুক্তি মেলে নি।’
‘দেড় হাজার বছর আগে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বে এক মহাবিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল, যার মূলমন্ত্র ছিল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এই আদর্শের ওপর ভিত্তি করে যে সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেখানে এমন ন্যায় ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে, মানুষ রাতে ঘরের দরজা খোলা রেখে ঘুমাতে পারত। এটি কোনো অলীক কল্পনা নয়, বরং ঐতিহাসিক সত্য।’ -বলেন তিনি।
তিান বলেন, মানুষের তৈরি বাদ-মতবাদ এর জন্য আর একটি প্রাণও, একটা ফোটা রক্তও আমরা অপচয় করব না। ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া এই হানাহানি-দলাদলির নোংরা রাজনীতির বলি হতে আমরা নারাজ -বলেন এই ছাত্র নেতা।
তিনি বলেন, প্রকৃতিতে আরো একটি মহাবিপ্লবের দামামা বাজছে। যে বিপ্লব হবে আল্লাহর জন্য, মানুষের জন্য, মানবতার জন্য। যার মূলমন্ত্র হবে সেই ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। যার ফলাফল হবে মানবরচিত ব্যর্থ জীবনবিধান পরিত্যাগ করে আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে প্রকৃত অর্থে বৈষম্যহীন, ন্যায়, সাম্য, সুবিচার, শান্তি, সম্প্রীতিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।
এর আগে সকাল ১০ টায় পবিত্র কোরান তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। কোরান থেকে তেলাওয়াত করেন রিফাত হাসান।
খুশবু ইসলাম জেরিন, নওশীন আমিন, তাবাচ্ছুম হক তাসিন ও মুগিরার যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি জাকারিয়া মাহথির বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল। কিন্তু কয়েক মাসের মাথায়ই সেই আশা দুরাশায় পর্যবসিত হয়েছে। মানুষ আজও নিরাপদ নয়, অর্থনৈতিক সংকট এক বিরাট আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক একটি গোষ্ঠী মব সৃষ্টি করে একটার পর একটা নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন আবার নির্বাচনী দামামা বাজছে। তারা বলছে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনই সকল সমস্যার সমাধান। যদিও সুষ্ঠু নির্বাচন এর আগেও হয়েছে, কিন্তু কাক্সিক্ষত ফল পায়নি জাতি।
তিনি বলেন, মানবরচিত এই সিস্টেম চালু রেখে শান্তি প্রতিষ্ঠার সকল প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হতে বাধ্য- এটা এখন প্রমাণিত। তাই মানবরচিত জীবনবিধান পরিত্যাগ করে স্রষ্টার জীবনবিধানে প্রত্যাবর্তনের সময় এসেছে। এর জন্য আরেকটি রেনেসাঁ তরুণদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। আর এর জন্য যেকোনো বলিদান দিতে প্রস্তুত আছে হেযবুত তওহীদ ছাত্র ফোরাম।
সভাপতির বক্তব্যের পর ঢাকা বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটররা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে হেযবুত তওহীদ ছাত্র ফোরামের অংশগ্রহণে মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সহযোগিতায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। শক্ষর্িাথীদরে অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতকি আয়োজন অনুষ্ঠানে ভন্নি মাত্রা যোগ কর।
অনুষ্ঠানে ঢাকার বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হেযবুত তওহীদ ছাত্র ফোরামের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। তারা কোনো প্রকার অপরাজনীতিতে যুক্ত না হবার প্রতিজ্ঞা করেন এবং তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে নিজেদের শক্তি, মেধা, জীবন, সম্পদ উৎসর্গ করার অঙ্গীকার করেন।