
সম্প্রতি ধর্মীয় বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনানের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন নাহার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে দাবি করেন যে ত্বহা আদনান রাজধানীর জারিন জাবিন নামের এক এয়ার হোস্টেসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন — নিয়মিত চ্যাট, ফোনালাপ এবং সাক্ষাতের কথাও সেখানে উল্লেখ আছে। সাবিকুন নাহারের পোস্টটি দ্রুত ভাইরাল হলে অনেকেই এই সম্পর্ককে ‘পরকীয়া’ বলে অভিহিত করে ত্বহার দায় ও শাস্তি দাবি করেন; একই সাথে আলেম সমাজ এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে উদ্বেগ ও বিব্রতকর প্রতিক্রিয়াও দেখা যায়।
এই সমালোচনার প্রেক্ষিতে লেখক ও দাওয়াহকর্মী আইনুল হক কাসিমী গত রোববার ফেসবুকে ত্বহা আদনানের পক্ষে সাফাই গেয়ে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন। কাসিমী, যিনি দেওবন্দি ধারার শিক্ষিত ও পরিচিত লেখক, সেখানে বলেন—যদি সাবিকুন নাহারের অভিযোগ সত্যও হয়, তবুও ব্যক্তিগত বিষয় জনসম্মুখে প্রকাশ করা ঠিক হয়নি; পারিবারিকভাবে বিষয়টি সমাধান করা উচিত ছিল। তিনি আরও বলেন সাবিকুন নাহার তার সতীন-মেনে নেওয়ার জেদ কিংবা হিংসার কারণে ত্বহার এবং তার প্রচারের ক্ষতি করেছেন; বরং তিনি সুপারিশ করেন, যদি সাবিকুন চাহেন, তিনি ওই বিমানবালাকে তৃতীয় স্ত্রী করে ত্বহার ‘চোখ শীতল’ করে দিতে পারতেন—এভাবেই দ্বীনের জন্য ‘আত্মত্যাগ’ দেখানো উচিত ছিল, এমনই বক্তব্য কাসিমীর।
আইনুল হকের এই মন্তব্যই সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জন্মায়। অনেকেই মনে করেন যে কাসিমীর বক্তব্যে পুরুষকে ক্ষমা করে দেওয়া ও নারীর কাছে সহ্য করার ও ‘ত্যাগ’ করার অনুরোধ করে ভিকটিম-ব্লেমিংয়ের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। বিশেষত নারী ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্ষোভ তীব্র: তারা বলেন—পরকীয়াকে না করে ত্বহার কার্যকলাপ নিয়ে কথা বলা হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু উল্টো কাসিমী স্ত্রীর দিকে আঙ্গুল তুলে তাকে সব ‘সহতে’ বলছেন; এতে হারাম কাজকে ন্যায়সঙ্গত করার বিপজ্জনক প্রভাব পড়বে।
সমালোচকদের একাংশ প্রশ্ন করেন—শরীয়াহ অনুযায়ী পরকীয়া বা যিনা-এর শাস্তি ও বিচার কী হবে, কেন সেই বিষয়টি নিয়ে কাসিমী সুষ্পষ্ট কোন বক্তব্য দেননি; বরং তিনি ব্যক্তিগত মনস্তাত্ত্বিক উপদেশে সীমাবদ্ধ রয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, একজন জনস্বীকৃত দাঈ বা আলেম যদি এ রকম সংবেদনশীল বিষয়ে ভিকটিম-ব্লেমিং করেন, তাহলে তা আলেম সমাজের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং সাধারণ মানুষের আস্থাকে দুর্বল করবে। অনেকে কাসিমীর পোস্ট ডিলিট করে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন।
অন্যদিকে আইনুল হকের সমর্থকরা বলেন, দাওয়াহের সুনাম রক্ষা করাও জরুরি; সামাজিক বনাম ব্যক্তিগত সমাধান নিয়ে বিতর্ক জটিল। ত্বহার নিজস্ব প্রতিক্রিয়ায় (প্রকাশিত ক্ষেত্রে) বিয়েতে বিশ্বাসী হওয়ার ইঙ্গিত থাকলেও বিয়ে-আগের সম্পর্কের রীতি–নীতি সমালোচিত হয়েছে—এই দিকটি কাসিমী উল্লেখ করেছেন বলে তিনি জবাব দিয়েছেন। তবে অনেকেই মনে করেন, এ ধরনের ব্যাখ্যা ন্যায়সঙ্গত নয় কারণ স্বামী-স্ত্রী উভয়ের কর্তব্য ও দায়িত্ব আছে এবং যদি অপরাধ সাপছন্দে প্রমাণিত হয় তবে আইন ও নৈতিকতার আলোকে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
মোটের ওপর ঘটনাটি কেবল ব্যক্তিগত সম্পর্কের সমালোচনায় সীমাবদ্ধ না থেকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রশ্ন উত্থাপন করেছে—কোনভাবে ভিকটিম-ব্লেমিং হওয়া উচিত না, বা আলেমদের আচরণ ও ধারা জনগণের আস্থার ওপর কিভাবে প্রভাব ফেলে—এসবই আলোচ্য কেন্দ্রে দাঁড়িয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নারী সংগ্রামের কণ্ঠস্বর উজ্জ্বলভাবে দেখা গেছে; তারা দাবি করছেন যে দায় কর্তেন ব্যক্তিদের কড়াভাবে জবাবদিহি করা উচিত এবং নারীকে ‘চুপ করে সহ্য করা’ বা ‘ত্যাগ করা’ হিসেবে দেখিয়ে সমস্যার প্রকৃত কারণ আড়াল করা যাবে না।
এই বিষয়ে ন্যায্যতা ও নৈতিকতার প্রশ্ন এখন বিতর্কিত টেবিলে রয়েছে—জনসাধারণ, আলেম সমাজ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কীভাবে এই বিষয়টির তদন্ত, প্রমাণ-ভিত্তিক ব্যাখ্যা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন, সেটাই আগামী দিনের চর্চায় ঘনিষ্ঠভাবে নজরকাড়া বিষয় হিসেবে থাকবেনা বলা যায় না।