
গাজীপুর প্রতিনিধি:
গাজীপুরে কোনো ধরনের ডাক্তারি ডিগ্রি বা প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি ছাড়াই প্রায় দুই দশক ধরে নিজেকে দন্তচিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা করানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে মো. ফিরোজ মিয়া নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গাজীপুর মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র জয়দেবপুর মাছ বাজারে “লিমা ডেন্টাল কেয়ার” নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে তিনি এই ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সরেজমিনে ও স্থানীয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এই দন্তচিকিৎসালয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এর নিবন্ধন কিংবা সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নেই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘকাল ধরে এই অবৈধ চিকিৎসালয়টি পরিচালিত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো তদারকি বা প্রশাসনিক অভিযান চোখে পড়েনি। তাদের ভাষ্যমতে, ফিরোজ মিয়া কোনো স্বীকৃত মেডিকেল কলেজ বা ডেন্টাল ইনস্টিটিউট থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে কোনো ডিগ্রি অর্জন করেননি। তথাপি তিনি বছরের পর বছর ধরে দাঁত তোলা, রুট ক্যানেল, ফিলিং, স্কেলিংসহ বিভিন্ন জটিল চিকিৎসা দিয়ে আসছেন, যা সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।
সম্প্রতি “লিমা ডেন্টাল কেয়ার” এ সরেজমিনে গিয়ে এক ভয়াবহ ও অস্বাস্থ্যকর চিত্র দেখা যায়। চিকিৎসায় ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলো অত্যন্ত নোংরা এবং জীবাণুমুক্ত করার কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেক যন্ত্রপাতি ধুলোর পুরু আস্তরণে ঢাকা, কিছু যন্ত্রাংশে মারাত্মকভাবে মরিচা পড়েছে এবং ক্ষয়ে গিয়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এমন পরিবেশে চিকিৎসা প্রদান করা হলে রোগীদের হেপাটাইটিস-বি, সি, এইচআইভি-সহ বিভিন্ন রক্তবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবল ঝুঁকি রয়েছে, যা তাদের জীবনকে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মামুনুর রহমান জানান, “সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা দ্রুতই তদন্ত করব এবং সত্যতা পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
প্রতিষ্ঠানটির বৈধতা যাচাই করতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৪ এর ট্রেড লাইসেন্স শাখায় যোগাযোগ করা হলে, সেখানকার এক পরিদর্শক নিশ্চিত করেন যে, ‘লিমা ডেন্টাল কেয়ার’ নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স তাদের দফতর থেকে ইস্যু করা হয়নি।
এদিকে অভিযুক্ত ফিরোজ মিয়া গণমাধ্যমের কাছে তার ক্লিনিকের কোনো সরকারি কাগজপত্র বা অনুমোদন না থাকার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। তবে তিনি দায় এড়ানোর চেষ্টা করে দাবি করেন, “আমার ছেলে মো. সাজ্জাদ হোসাইন একজন বিডিএস ডিগ্রিধারী চিকিৎসক এবং সেই এখানে রোগী দেখে। আমি শুধু প্রতিষ্ঠানটির তত্ত্বাবধান করি।”
উল্লেখ্য বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) আইন, ২০১০ অনুযায়ী, বিএমডিসি-র নিবন্ধন ছাড়া কেউ নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিতে বা চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে পারেন না। শুধুমাত্র নিবন্ধিত বিডিএস (ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি) ডিগ্রিধারীরাই দাঁতের চিকিৎসা দেওয়ার যোগ্য। কোনো অনিবন্ধিত বা অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা প্রদান করা বা পরিচালনা করা একটি গুরুতর এবং দণ্ডনীয় অপরাধ। এই আইন অনুযায়ী, অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান উভয়ের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।