
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতভিন্নতা সত্ত্বেও অবশেষে আজ স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। নতুন সাজে সেজেছে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে এই গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। এতে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ও সদস্যরা, পাশাপাশি অংশ নেবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দুজন করে প্রতিনিধি। অনুষ্ঠানকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা, আর নিরাপত্তার অংশ হিসেবে সংসদ এলাকায় সব ধরনের ড্রোন উড়ানো নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বিশেষ বার্তা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি দেশের সব টেলিভিশন ও অনলাইন গণমাধ্যমকে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারের আহ্বান জানান এবং বলেন, “দেশের প্রতিটি মানুষকে বলছি—আপনি যেখানেই থাকুন, ঘরে বা পথে, দোকানে, কারখানায়, মাঠে বা খেলাধুলার প্রাঙ্গণে—এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের অংশ হোন। রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা জাতিগত ভিন্নতা সত্ত্বেও আমরা সবাই এক ও অভিন্ন জাতি।”
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “এটাই আমাদের একসঙ্গে উদ্যাপনের সময়—ঐক্যের শক্তি অনুভব করার সময়, গর্ব ও আশার এই ঐতিহাসিক দিন থেকে নতুন প্রেরণা পাওয়ার সময়।”
গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। প্রথম ধাপে গঠন করা হয় ছয়টি সংস্কার কমিশন—সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। এই কমিশনগুলোর প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম পর্বে ৩৩টি এবং দ্বিতীয় পর্বে ৩০টি দলের সঙ্গে আলোচনার পর ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্যে পৌঁছে কমিশন।
এরপর গত ১৬ আগস্ট রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের খসড়া পাঠানো হয়। প্রাথমিক খসড়ায় কিছু ত্রুটি ধরা পড়লে তা সংশোধন করে নতুন সংস্করণ পাঠানো হয়। ২০ আগস্ট পর্যন্ত দলগুলোকে মতামত দেওয়ার সময় বাড়ানো হয়। পরবর্তীতে সব দলের মতামত এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে জুলাই সনদকে চূড়ান্ত করা হয়।
অবশেষে ১৪ অক্টোবর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সনদের চূড়ান্ত কপি সব রাজনৈতিক দলের কাছে হস্তান্তর করে। আজ সেই ঐতিহাসিক দলিলেই স্বাক্ষর হবে, যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।