
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ২৩টি পদের মধ্যে ২০টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল। বাকি তিনটি পদে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার, ক্রীড়া সম্পাদক পদে নার্গিস আক্তার এবং বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক পদে তোফায়েল আহমেদ তোহা।
নির্বাচনের ফলাফল শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক সেতাউর রহমান ঘোষণা করেন। দীর্ঘ ৩৪ বছর পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে শিবির সমর্থিত প্যানেলের বিশাল বিজয় লক্ষ্য করা যায়। সহসভাপতি পদে মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বিপুল ভোটের ব্যবধান নিয়ে জয়ী হয়েছেন। তিনি ১২ হাজার ৬৮৭ ভোট পেয়েছেন, যেখানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত শেখ নূর উদ্দীন আবির পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৯৭ ভোট।
সাধারণ সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার ১১ হাজার ৫৩৭ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শিবির সমর্থিত ফজলে রাব্বি ফাহিম রেজা পেয়েছেন ৫ হাজার ৭২৯ ভোট। সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে শিবির সমর্থিত সালমান সাব্বির ৬ হাজার ৯৭১ ভোটে জয়ী হয়েছেন, যেখানে ছাত্রদল সমর্থিত জাহিন বিশ্বাস এষা পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৪১ ভোট।
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়। দীর্ঘ বিরতির পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চর্চার নতুন সূচনা।
নির্বাচন কার্যক্রম বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি একাডেমিক ভবনের ১৭টি কেন্দ্রে সম্পন্ন হয়। ভোটগ্রহণের পর রাতে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ধাপে ধাপে ভোট গণনা শুরু হয় এবং ফলাফল ঘোষণা করা হয়। মোট ভোটার ছিলেন ২৮,৯০১ জন, যার মধ্যে ছাত্র ভোটার ১৭,৫৯৬ এবং ছাত্রী ভোটার ১১,৩০৫। ভোট পড়ার হার ৬৯.৮৩ শতাংশ এবং নারী হলে ভোটের হার ছিল ৬৩.২৪ শতাংশ।
রাকসুর ২৩ পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ২৪৭ জন প্রার্থী। এছাড়া হল সংসদের ১৫ পদে ৫৯৭ জন এবং সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ৫ পদে ৫৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
নির্বাচিত প্রধান পদগুলোতে সহসভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আম্মার, সহ-সাধারণ সম্পাদক এস এম সালমান সাব্বির। ক্রীড়া সম্পাদক হয়েছেন নার্গিস খাতুন এবং সহক্রীড়া সম্পাদক আবু সাইদ মোহাম্মদ। সাংস্কৃতিক সম্পাদক জাহিদ হাসান এবং সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম। মহিলা সম্পাদক সাইয়্যেদা হাফসা এবং সহমহিলা সম্পাদক সামিয়া জাহান। তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক বি এন নাজমুস সাকিব, সহতথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সিফাত আবু সালেহ। মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক মোহাম্মদ মোজাহিদ ইসলাম এবং সহমিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক আসাদুল্লাহ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ তোফা এবং সহবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মোজাহিদুল ইসলাম সায়েম। বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক ইমরান মিয়া লস্কর এবং সহবিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক মোহাম্মফ নয়ন হোসেন। পরিবেশ ও সমাজসেবা সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদ এবং সহপরিবেশ ও সমাজসেবা সম্পাদক মাসুমা ইসলাম মুমু। চার কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ দীপ মাহবুব, মোহাম্মদ ইমজিয়াল হক কামালী, সুজন চন্দ্র ও এবি এম খালেদ।
সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন সালাহউদ্দিন আম্মার, মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, ফাহিম রেজা, আকিল বিন তালেব এবং সালমান সাব্বির।