Date: October 18, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / প্রযুক্তি / চ্যাটজিপিটিকে ভয়ংকর প্রশ্ন করায় হলো ১৩ বছরের কিশোরকে গ্রেপ্তারের কারণ - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

চ্যাটজিপিটিকে ভয়ংকর প্রশ্ন করায় হলো ১৩ বছরের কিশোরকে গ্রেপ্তারের কারণ

October 16, 2025 03:29:06 PM   অনলাইন ডেস্ক
চ্যাটজিপিটিকে ভয়ংকর প্রশ্ন করায় হলো ১৩ বছরের কিশোরকে গ্রেপ্তারের কারণ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে গুলি চালানোর ভয়াবহতার পর শিক্ষার্থীদের অনলাইন কর্মকাণ্ডের উপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে সম্প্রতি একটি ঘটনা এই নজরদারি কতটা ‘বাস্তবসম্মত’ হতে পারে তা নতুনভাবে প্রমাণ করেছে। ফ্লোরিডার ডিল্যান্ড শহরের সাউথওয়েস্টার্ন মিডল স্কুলে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোর স্কুলের কম্পিউটার ব্যবহার করে চ্যাটজিপিটিকে জিজ্ঞেস করে, “কীভাবে ক্লাসের মধ্যে আমার বন্ধুকে হত্যা করতে পারি?”।

প্রাথমিকভাবে এটি একটি সাধারণ টাইপ করা প্রশ্ন মনে হলেও, স্কুলের নিরাপত্তা নজরদারি ব্যবস্থা সঙ্গে সঙ্গে এই বার্তাটি শনাক্ত করে। স্কুলের অনলাইন নিরাপত্তা নজরদারি পরিচালনা করে গ্যাগল (Gaggle) নামের সংস্থা। তারা শিক্ষার্থীদের অনলাইন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এবং নির্দিষ্ট কীওয়ার্ড—যেমন “kill”, “murder”, “suicide”—সহ বিপজ্জনক আচরণের সম্ভাবনা শনাক্ত করে। গ্যাগল শিক্ষার্থীদের ব্রাউজিং ইতিহাস এবং চ্যাট বিশ্লেষণ করে আত্মহত্যা, সহিংসতা বা বুলিং–সংক্রান্ত হুমকি চিহ্নিত করে এবং প্রাসঙ্গিক স্ক্রিনশটসহ স্কুল কর্তৃপক্ষকে সতর্কবার্তা পাঠায়।

স্কুল প্রশাসন সেই সতর্কবার্তা পাওয়ার পর স্থানীয় পুলিশকে জানায়। ভলুসিয়া কাউন্টি শেরিফ অফিস কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিশোর জানায়, সে কেবল মজা করছিল এবং একজন বন্ধুকে ঠাট্টা করার উদ্দেশ্যেই প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করেছিল। কিন্তু পুলিশ বিষয়টিকে হালকাভাবে নেননি। শেরিফ অফিস এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, এই ধরনের ‘রসিকতা’ পুরো স্কুলে জরুরি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। শেষ পর্যন্ত কিশোরকে গ্রেপ্তার করে কিশোর হেফাজতে পাঠানো হয়, যদিও তার বিরুদ্ধে কোন ধারায় মামলা করা হয়েছে, তা এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

নজরদারি ব্যবস্থাকে ঘিরে এখনো চলছে বিতর্ক। গ্যাগলের ওয়েবসাইটে বলা আছে, “শিক্ষার্থীরা যখন স্কুলের প্রযুক্তি ব্যবহার করে, তখন তাদের গোপনীয়তার প্রত্যাশা করা উচিত নয়।” সংস্থাটির দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের Children’s Internet Protection Act (CIPA) অনুযায়ী স্কুলগুলোর আইনগত দায়িত্ব হলো শিক্ষার্থীদের অনুপযুক্ত বা ক্ষতিকর অনলাইন কনটেন্ট থেকে রক্ষা করা। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের প্রযুক্তি স্কুলে পুলিশের উপস্থিতি স্বাভাবিক করে তুলছে এবং শিশুদের অনলাইন জীবনে আইনের চাপ বৃদ্ধি করছে।

সাম্প্রতিক সময়ে চ্যাটজিপিটি ও গুগল জেমিনির মতো চ্যাটবটের ব্যবহারকে ঘিরে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ এসেছে যে, দীর্ঘ কথোপকথন ব্যবহারকারীর মানসিক বিভ্রম বা “AI Psychosis” বাড়িয়ে দিতে পারে। ওপেনএআই কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ফ্লোরিডার এই ঘটনা নতুন করে আলোচনায় এনেছে অনলাইন নজরদারির সীমা এবং শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রশ্ন।

শিশুদের নিরাপত্তা রক্ষা করতে গিয়ে যদি তাদের প্রতিটি অনলাইন বাক্যই পুলিশের নজরদারির আওতায় আসে, তাহলে সেই নিরাপত্তা কতটা মানবিক এবং প্রাইভেসি সংরক্ষিত তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নতুনভাবে প্রশ্ন উঠেছে।