
বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞান অঙ্গনে এক চমকপ্রদ আবিষ্কার নিয়ে আলোচনা চলছে—তেলাপোকার দুধ গরুর দুধের চেয়ে তিনগুণ বেশি পুষ্টিকর হতে পারে। শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও, সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, নির্দিষ্ট প্রজাতির এক তেলাপোকা এমন এক ধরনের পুষ্টিকর তরল উৎপাদন করে যা ভবিষ্যতের “সুপারফুড” হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
গবেষণায় ব্যবহৃত প্রজাতিটির নাম Diploptera punctata, যা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। এই তেলাপোকা অন্যান্য প্রজাতির মতো ডিম না দিয়ে সরাসরি জীবন্ত সন্তান জন্ম দেয়। সন্তানদের পুষ্টি জোগাতে এটি দুধের মতো এক ধরনের তরল নিঃসরণ করে। আশ্চর্যের বিষয়, সেই তরলের মধ্যে পাওয়া গেছে প্রোটিন ক্রিস্টাল, যা শক্তি ও পুষ্টিতে গরুর দুধের তুলনায় তিনগুণ বেশি সমৃদ্ধ।
ভারতের Institute for Stem Cell Biology and Regenerative Medicine-এর গবেষকরা জানিয়েছেন, একটি মাত্র এই প্রোটিন ক্রিস্টাল এমন পরিমাণ শক্তি দিতে পারে, যা সমান পরিমাণ গরুর দুধের তুলনায় তিনগুণ বেশি। এতে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ প্রোটিন, প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড, লিপিড ও শর্করা। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো—এই ক্রিস্টালগুলো ধীরে ধীরে শক্তি নিঃসরণ করে, ফলে দীর্ঘ সময় ধরে এটি শরীরে পুষ্টির জোগান দিতে সক্ষম।
তবে বাস্তবিক দিক থেকে এখনো এই দুধের বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্ভব হয়নি। কারণ, প্রতিটি তেলাপোকা খুব অল্প পরিমাণ দুধ নিঃসরণ করে। এজন্য গবেষকেরা বর্তমানে জৈবপ্রযুক্তির মাধ্যমে ইস্ট বা খামিরে এই প্রোটিন ক্রিস্টাল তৈরি করার চেষ্টা করছেন। এতে করে ভবিষ্যতে এটি বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন সম্ভব হতে পারে।
যদিও এখনো এই “তেলাপোকার দুধ” খাদ্য হিসেবে অনুমোদিত নয়, বিজ্ঞানীরা মনে করছেন ভবিষ্যতে এটি হতে পারে খাদ্যসংকট মোকাবিলার এক অভিনব উপায়। বিশ্বজুড়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্যঘাটতির প্রেক্ষাপটে পোকা-ভিত্তিক প্রোটিনের এই ধারণা হয়তো আগামী দিনের টেকসই পুষ্টি সমাধানের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠতে পারে।