
সাতক্ষীরায় চিংড়ি শিল্পের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ এবং এর সম্ভাবনা বিকাশের লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই সভা আয়োজন করা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ। আলোচনায় অংশ নেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিএম সেলিম এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পওর বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন ও পওর বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাযকিয়াসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
সভায় চিংড়ি চাষিরা তাদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ঘেরের পানি নিয়ন্ত্রণকারী বক্স-কালভার্টগুলো অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, এটি করা হলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে আইলা ও সিডরের মতো ভয়াবহ দুর্যোগের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। চাষিরা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাতক্ষীরার পরিস্থিতি দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে ভিন্ন। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ১৯৮৮ সাল থেকেই চিংড়ি ঘেরে পানি প্রবেশ ও নিষ্কাশনের জন্য বক্স-কালভার্ট ব্যবহার হয়ে আসছে।
চাষিদের মতে, পাউবো কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না করেই হঠাৎ করে বক্স-কালভার্টগুলো ভেঙে ফেলার পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা চিংড়ি শিল্পকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে। লবণাক্ততার কারণে এসব এলাকায় ধান বা অন্য কোনো মাছ চাষ করা সম্ভব নয়। ফলে ‘সাদা সোনা’ খ্যাত চিংড়ি শিল্পের বিপর্যয় ঘটলে সাতক্ষীরার অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তারা আরও বলেন, চিংড়ি চাষ ব্যাহত হলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে, চাষিরা ব্যাংক ঋণে খেলাপি হয়ে পড়বেন এবং এই শিল্পের সাথে জড়িত অসংখ্য মানুষ বেকার হয়ে পড়বে, যা সামাজিক অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা সৃষ্টি করবে।
চিংড়ি চাষিদের বক্তব্য শোনার পর জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ চিংড়ি শিল্পকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে দ্রুত একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। এই কমিটিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৎস্য কর্মকর্তা এবং চিংড়ি চাষিদের প্রতিনিধিরা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। সভায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও বিপুল সংখ্যক চিংড়ি চাষি উপস্থিত ছিলেন।