
হবিগঞ্জের মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত শাহজীবাজার রাবার বাগান দীর্ঘদিনের লোকসান কাটিয়ে অবশেষে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। সবুজে আচ্ছাদিত নতুন চারার সারি যেন বয়ে আনছে নতুন সম্ভাবনার বার্তা।
বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ১৯৮০ সালে প্রায় ২,১০৪ একর পাহাড়ি জমিতে শাহজীবাজার রাবার বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন প্রায় দুই লাখ ত্রিশ হাজার গাছ রোপণ করা হয়েছিল। ১৯৯০ সাল থেকে এসব গাছ থেকে রাবার উৎপাদন শুরু হলেও ২০১৫ সালের পর অধিকাংশ গাছের উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় বাগানটি লোকসানে পড়ে।
শাহজীবাজার রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক নন্দী গোপাল রায় জানান, “গাছগুলো বয়সসীমা অতিক্রম করায় উৎপাদন কমে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা নতুন চারা রোপণের উদ্যোগ নিয়েছি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ৬০ একর জমিতে নতুন গাছ লাগানো হয়েছে। কয়েক বছরের মধ্যেই এসব চারা থেকে উৎপাদন শুরু হবে।”
উৎপাদনের পরিসংখ্যানও এই ঘুরে দাঁড়ানোর সাক্ষ্য দেয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৭০ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছিল ৪২৯.৯৪ মেট্রিক টন। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩৯৫ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ইতোমধ্যেই ৩৭৬.২২ মেট্রিক টন রাবার উৎপাদিত হয়েছে। বর্তমানে বাগানে কর্মরত প্রায় ২৫৭ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অক্লান্ত পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতায় আবারও প্রাণ ফিরে পাচ্ছে এই বাগান।
ব্যবস্থাপক নন্দী গোপাল রায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, “আমরা চাই শাহজীবাজার রাবার বাগান শুধু লোকসান কাটিয়েই নয়, আগামীতে দেশের অর্থনীতিতে রাবার শিল্পের এক শক্তিশালী অবলম্বন হয়ে উঠুক।”
এদিকে, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, সরকার রাবার উৎপাদন বাড়াতে বিদেশ থেকে উন্নত জাতের ক্লোন আনার উদ্যোগ নিয়েছে। মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কার কাছে ইতোমধ্যেই আবেদন করা হয়েছে এবং এর মধ্যে একটি দেশ ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। পাশাপাশি রাবার শিল্পের সঙ্গে বৈচিত্র্যমুখী বনজ শিল্পের প্রসার ঘটাতে একটি মাস্টারপ্ল্যানও প্রণয়ন করা হচ্ছে।