
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ইলিশ রপ্তানির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শর্তসাপেক্ষে ভারতবর্ষে মোট এক হাজার ২০০ টন ইলিশ রপ্তানি করা হবে। এ অনুমতি পেয়ে পশ্চিমবঙ্গের আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা যেমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন, তেমনি সাধারণ মানুষও খুশির বার্তা পাচ্ছেন।
বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন ও স্থানীয় চাহিদা বিবেচনায় ২০১৪ সালে রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে দুই বাংলার সাংস্কৃতিক ও সামাজিক যোগসূত্রকে সামনে রেখে ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার আগে সীমিত পরিমাণে ইলিশ রপ্তানি পুনরায় শুরু হয়। গত বছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে তিন হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, যদিও পরবর্তীতে সেটি কমিয়ে ২ হাজার ৪২০ টনে নামিয়ে আনা হয়। এ বছর তুলনামূলকভাবে সীমিত পরিমাণে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইলিশের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। যদিও স্থানীয়ভাবে পদ্মা ও গঙ্গা নদীতে কিছু ইলিশ ধরা পড়ে, তবে তা বিপুল চাহিদা মেটাতে সক্ষম নয়। ফলে প্রতিবছর পশ্চিমবঙ্গকে গুজরাট কিংবা মিয়ানমার থেকে ইলিশ আমদানি করতে হয়। দুর্গাপূজার আগে এই চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের কাছে বিশেষ অনুমতি চেয়ে আসছেন। এবারের ঘোষণার পর কলকাতার বাজারগুলোতে একপ্রকার স্বস্তির হাওয়া বইছে।
পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট ইলিশ আমদানিকারক সৈয়দ আনোয়ার মোকসেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, “বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আসা মানেই দুই বাংলার সম্পর্কের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দুর্গাপূজার আগে এই সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষকে আনন্দ দেবে এবং দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে।”
বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রপ্তানি প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে ইচ্ছুক ব্যবসায়ীদের ১১ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে হার্ড কপিতে আবেদন করতে হবে। আবেদনের সঙ্গে হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, ইআরসি (ইমপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট), আয়কর ও ভ্যাট সার্টিফিকেট, মৎস্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স এবং বৈধ বিক্রয় চুক্তিপত্র জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। প্রতি কেজি ইলিশের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ মার্কিন ডলার।
সরকার বলছে, দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য রপ্তানির পরিমাণ সীমিত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি রপ্তানিকারকদের জন্যও কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়েছে, যাতে প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ হয় এবং জাতীয় স্বার্থ অক্ষুণ্ণ থাকে।
বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানির এই বিশেষ উদ্যোগকে ঘিরে ইতোমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের বাজারে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, দুর্গাপূজা মানেই পরিবারে ইলিশ, আর সেটি যদি আসে বাংলাদেশ থেকে, তবে উৎসবের আনন্দ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।