
আর্জেন্টিনা ও পুয়ের্তো রিকোর মধ্যকার আজকের প্রীতি ম্যাচটি নামেই ‘প্রীতি’, বাস্তবে ছিল একতরফা দাপটের প্রদর্শনী। মায়ামির চেজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা হেসেখেলে ৬–০ গোলের বিশাল ব্যবধানে উড়িয়ে দেয় ক্যারিবিয়ান প্রতিপক্ষ পুয়ের্তো রিকোকে।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে আর্জেন্টিনার চেয়ে ১৫২ ধাপ পিছিয়ে থাকা পুয়ের্তো রিকো শুরু থেকেই ছিল রক্ষণে ব্যস্ত। ম্যাচের মাত্র ১৩ মিনিটেই মেসির শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসলে, রিবাউন্ড বল থেকে নিকো গঞ্জালেসের শট ম্যাক অ্যালিস্টারের পায়ে লেগে জালের দেখা পায়। সেই গোলেই শুরু হয় গোলবন্যার ইঙ্গিত।
২২ মিনিটে মেসির বাতাসে ভাসানো নিখুঁত পাসে গঞ্জালো মন্তিয়েল গোল করলে ব্যবধান হয় দ্বিগুণ। এই অ্যাসিস্টের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোল বানানোর তালিকায় ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমারকে (৫৯) ধরে ফেলেন মেসি। এরপর নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ছয় মিনিট আগে লাওতারোকে ব্যাক পাস দিয়ে আরেকটি গোল করান তিনি, যা মেসিকে এককভাবে শীর্ষে তুলে দেয়—আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ ৬০টি গোল বানানোর নতুন রেকর্ড গড়ে ইতিহাসে নাম লেখান আর্জেন্টাইন মহাতারকা।
প্রথমার্ধে পুয়ের্তো রিকোর উইফ্রেদো রিভোর একটি দুরপাল্লার শট ঠেকিয়ে দেন আর্জেন্টাইন গোলকিপার। এর বাইরে প্রায় পুরো সময় জুড়েই খেলা ছিল আর্জেন্টিনার নিয়ন্ত্রণে। স্কালোনির দলের বল দখল ছিল ৬৮.৬ শতাংশ সময়, ২৫টি শটের মধ্যে ১১টি ছিল টার্গেটে। পুয়ের্তো রিকোর গোলকিপার সেবাস্তিয়ান কাটলের ছয়টি দুর্দান্ত সেভ ম্যাচে বড় ব্যবধান ঠেকিয়ে দেন, না হলে গোলের সংখ্যা আরও বাড়তে পারত।
৩৬ মিনিটে অভিষিক্ত ফ্লাকো লোপেজের পাস থেকে ম্যাক অ্যালিস্টার করেন নিজের দ্বিতীয় গোল। বিরতির পর আর্জেন্টিনা যোগ করে আরও দুটি গোল, যার একটি আত্মঘাতী। শেষ দিকে ৭৯ ও ৮৪ মিনিটে লাওতারো মার্তিনেজের জোড়া গোলের মাধ্যমে পূর্ণতা পায় স্কোরলাইন। শেষ গোলটি ছিল মেসি ও লাওতারোর বোঝাপড়ার নিখুঁত উদাহরণ—বক্সে দৌড়ের মাঝে লাওতারোকে ব্যাক পাস দেন মেসি, আর তাতেই সম্পূর্ণ হয় ৬-০ তে জয়ের গল্প।
এই ম্যাচে আর্জেন্টিনার চার ফুটবলারের অভিষেক হয়—ফ্লাকো লোপেজ, অ্যানেবাল মোরেনো, লাওতারো রিভেরো ও গোলকিপার ফাকুন্দো ক্যাম্বেসেস। ৭৬ মিনিটে মার্তিনেজকে তুলে এনে ফাকুন্দোকে মাঠে নামান কোচ স্কালোনি, বিরতির পর বদলি হিসেবে আসেন মোরেনো ও রিভেরো।
যদিও ম্যাচটি ছিল প্রীতি, আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা এটিকে নিলেন ২০২৬ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে। ফলে মাঠে ছিল না কোনো ঢিলেমি—প্রতি সুযোগেই তারা গোল করেছেন, প্রতিটি আক্রমণেই ছিল ছন্দ। বিশ্রাম থেকে ফিরে মেসির রেকর্ড ভাঙা, দলের প্রভাবশালী জয় ও নবাগতদের আত্মবিশ্বাসী পারফরম্যান্স—সব মিলিয়ে আর্জেন্টিনার জন্য এটি ছিল নিখুঁত প্রস্তুতির এক রাত।