
দীর্ঘ সাত বছর পর গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু) নির্বাচন আবারও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ৩টা পর্যন্ত টানা ছয় ঘণ্টা চলবে ভোটগ্রহণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি ভোটকেন্দ্রে এ নির্বাচনে ভোট দেবেন ৪ হাজার ৭৬১ জন শিক্ষার্থী। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসজুড়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হয় নির্বাচনী প্রচারণা। শেষ মুহূর্তে প্রার্থীরা অভিনব কায়দায় প্রচারণায় নেমেছিলেন। কেউ গান গেয়ে, কেউ ব্যতিক্রমী প্রচারপত্র বিলি করে কিংবা বিভাগে বিভাগে গিয়ে সরাসরি সংযোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভোট প্রার্থনা করেছেন। ফলে গোটা ক্যাম্পাসই এক ধরনের উৎসবের আমেজে ভরে ওঠে। শিক্ষার্থীরাও দীর্ঘদিন পর ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে মোট ১১টি পদে লড়ছেন ৬৩ জন প্রার্থী। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত ১১ আগস্ট তফসিল ঘোষণা করে প্রশাসন। এরপর ২৬ থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ হয়। যাচাই-বাছাই শেষে ৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয় প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা, পরে আপিল ও শুনানি শেষে ১৪ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্টও সম্পন্ন হয়েছে, যার রিপোর্ট পজিটিভ হলে প্রার্থিতা বাতিল হবে।
ভোটগ্রহণকে ঘিরে ক্যাম্পাসে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, র্যাব, আনসার ও এনএসআই–এর সমন্বয়ে মোট ৩৫০ জন নিরাপত্তা সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে। এছাড়া গঠন করা হয়েছে কুইক রেসপন্স টিম। ভোটকেন্দ্রে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা, যা থেকে সরাসরি বড় পর্দায় ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টরা।
গকসু নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র ড. ফুয়াদ হোসেন জানিয়েছেন, তফসিল অনুযায়ী মোট ১৩টি ধাপের মধ্যে ১১টি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু ভোটগ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশ বাকি। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, দেশের একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ একটি ব্যতিক্রম। এবার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির ক্ষেত্র তৈরি হবে।
উল্লেখ্য, দেশের একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ চালু রয়েছে। ২০১৩ সালে প্রথমবার গকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে তৃতীয় কার্যনির্বাহী সংসদ নির্বাচিত হলেও প্রশাসনিক জটিলতায় তারা পুরো মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর দীর্ঘ পাঁচ বছর স্থবিরতা কাটিয়ে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গকসুর চতুর্থ নির্বাচন, যা নিয়ে শিক্ষার্থী ও প্রার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও প্রত্যাশা দেখা দিয়েছে।